[ফেনীর সোনাগাজীতে শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে বিদ্যালয়ের মাঠে খোলা আকাশের নিচে বসে পড়াশোনা করতে হয় শিক্ষার্থীদের। হাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে}
দুই কক্ষের জরাজীর্ণ ভবন। এর একটিতে চলছে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রথম শ্রেণির ক্লাস। অন্যটিতে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন শিক্ষক। ভবনের এক কোনায় সিঁড়িঘরে চেয়ার-টেবিল পেতে চলছে দাপ্তরিক কার্যক্রম। ভবনের সামনের মাঠে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করা হচ্ছে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের। গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা গেল ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের হাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
সিঁড়িঘরে গিয়ে কথা হয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিনের সঙ্গে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, শ্রেণিকক্ষ–সংকটের কারণে দুই শিফটে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ক্লাস হয়। তাদের ছুটি হওয়ার পর তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা আসে। ক্লাস চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। তবে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সকাল ৯টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ক্লাস হয়। খোলা আকাশের নিচেই তাদের পাঠদান করা হয়। তবে বর্ষায় দুই শিফট করার পরও নিয়মিত ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয় না বলে জানান তিনি।
বিদ্যালয়টি ঘুরে দেখা যায়, ভবনটির দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। পলেস্তারা খসে পড়েছে ছাদের। মেঝেতেও ফাটল স্পষ্ট। কিছু ফাটলে সিমেন্ট দিয়ে আস্তরণের পর লাগানো হয়েছে রং। মাঠে গিয়ে কথা হয় পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইসরাত সুলতানার সঙ্গে। সে জানায়, অনেক সময় কড়া রোদের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস হয় তাদের। এতে তাদের কষ্ট হয়। বর্ষাকালে বৃষ্টি না থাকলেও বেশির ভাগ সময় মাঠ ভেজা থাকে। তখন ক্লাস করতে অসুবিধা হয়।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, হাজীপুর গ্রামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালে। ৫৩ শতাংশ জমিতে টিন আর বেড়া দিয়ে বিদ্যালয়টি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু চার থেকে পাঁচ বছরের মাথায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিদ্যালয়টি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর দীর্ঘদিন সেটি বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে ১৯৯০ সালে বিদ্যালয়টি পুনরায় চালু করা হয়েছে। ১৯৯৯ সালে সরকারিভাবে দুই কক্ষের ভবনটি নির্মাণ করা হয়।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আবদুল মান্নান বলেন, বিদ্যালয়ের ভবনটি এরই মধ্যে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় নতুন ভবন করার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে যোগাযোগ করে আসছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি তিনি বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছেন। নতুন একটি ভবনের জন্য এরই মধ্যে লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।