লক্ষ্মীপুর:
বড় কোনো কাজের অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু ভুয়া অভিজ্ঞতা দেখিয়ে একের পর এক সড়ক ও জনপথ বিভাগের বড় প্রকল্প হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আবিদ মনসুর কনস্ট্রাকশন নামে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, এর আগেও বিভিন্ন প্রতারণার কারণে ধরা পড়েছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। কিছু ঘটনার তদন্ত চলছে। কিন্তু তারপরও সংশ্লিষ্টদের অপরাধ থেমে নেই।
সম্প্রতি লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে একটি বড় প্রকল্প ভুয়া অভিজ্ঞতা দেখিয়ে হাতিয়ে নেওয়ার পায়তারা করার অভিযোগ ওঠে আবিদ মনসুর কনস্ট্রাকশনের বিরুদ্ধে। বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে প্রতিষ্ঠানটি এমন কর্মকাণ্ড করে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এসব ঘটনায় স্থানীয় ঠিকাদাররা লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক বরাবর সম্প্রতি একটি লিখিত অভিযোগ দেন। নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার নুরুল ইসলাম সিদ্দিক ও বরিশালের বটতলা এলাকার কাশেম আলী হাওলাদার নামে দুই ব্যক্তি এ অভিযোগ করেন। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব বরাবর করা অভিযোগে তারা আবিদ মনসুর কনস্ট্রাকশনের প্রতারণার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন।
বিষয়টি আমলে নিয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সহকারী সচিব মো. দেলোয়ার হোসেন গত ১৮ অক্টোবর সড়ক ভবনের প্রধান প্রকৌশলীকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দিতে চিঠি দেন। এছাড়া পৃথক দুটি জেলায় একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিগত সময়ের কাজ সমাপ্তির অভিজ্ঞতা সনদ যাচাই পূর্বক চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি ও ১৩ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা এবং বাগেরহাট সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীগণ পৃথক দুটি চিঠিসহ মতামত ইস্যু করেন। কিন্তু এখনও বিষয়গুলো আলোর মুখ দেখেনি।
সাতক্ষীরা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, তার দপ্তরের দরপত্রের সঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবিদ মনসুর কনস্ট্রাকশন কর্তৃক দাখিলকৃত কাজ সমাপ্তির অভিজ্ঞতা সনদসমূহ দপ্তর হতে ইস্যু করা হয়নি। উক্ত ভুয়া অভিজ্ঞতা সনদ দাখিল করায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কালো তালিকাভুক্ত ও দরপত্রের শর্তানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
এ চিঠির অনুলিপি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, সওজ, রংপুর জোন, সড়ক ভবন, রংপুর, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, সওজ, রংপুর সার্কেল, রংপুর ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রকিউরমেন্ট সার্কেল, সওজ, সড়ক ভবনে পাঠানো হয়।
এর আগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাট সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবিদ মুনসুর কনস্ট্রাকশনের ৫৬টি জাল সনদ শনাক্ত করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে সাতক্ষীরা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর মতোই চিঠি ইস্যু করেন বাগেরহাট সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী। চিঠিতে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হয়।
এ চিঠির অনুলিপি সকল অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকিউরমেন্ট সার্কেলের তত্ত্বাবধায়কসহ খুলনা ও বরিশাল সার্কেলে পাঠানো হয়েছে।
এত কিছুর পরও সম্প্রতি লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের টেন্ডার আহ্বানকৃত বড় প্রকল্পের কাজ পেতে আগের ন্যায় ভুয়া অভিজ্ঞতার সনদ সংযুক্ত করে টেন্ডারে অংশ নেয় আবিদ মনসুর কনস্ট্রাকশন। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী টেন্ডারে দাখিলকৃত আবিদ মনুসরের অভিজ্ঞতা সনদগুলোর সত্যতা যাচাই করেনি লক্ষ্মীপুর সড়ক বিভাগ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঠিকাদাররা জানায়, সংশ্লিষ্ট দফতরে কর্তাদের ম্যানেজ করে প্রতারণার মাধ্যমে কাজ পেতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। টেন্ডারে অংশ নিতে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের যেসব যোগ্যতা ও অনুরূপ কাজের অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান টেন্ডার ক্রয়-নীতি অনুযায়ী যা থাকা প্রয়োজন, অধিকাংশই নেই আবিদ মনসুর কনস্ট্রাকশনের। এত জালিয়াতি প্রমাণ হওয়ার পরও প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন কাজের ভুয়া ও জাল সনদ তৈরি করে নিয়মিত টেন্ডারে অংশ নেয়, এমনকি ওয়ার্ক অর্ডার পেয়ে যায়।
অভিযোগ আছে, ঠিকাদাররা আবিদ মনসুরের বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে।
দরপত্র বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত টিডিএস, টেন্ডার ক্যাপাসিটি ও সিপিটিইউ’র পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইনকে পাশ কাটিয়ে লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃপক্ষ দেশের টেন্ডার ব্যবস্থাপনা ও টেন্ডার আইন প্রয়োগকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে দাবি করছেন ঠিকাদাররা।
এ ব্যাপারে কথা বলতে আবিদ মনসুর কনস্ট্রাকশন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠান বা সংশ্লিষ্ট কেউ এ ব্যাপারে কোনো মতামত দিতে চাননি।
লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী ও স্থানীয় টেন্ডার কমিটির সদস্য সচিব হারুনুর রশিদ এ ব্যাপারে জানান, আবিদ মনসুর কনস্ট্রাকশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগ ভুয়া হতে পারে। কোনো ক্ষেত্রে শাস্তি পাওয়ার আগ পর্যন্ত ঠিকাদারকে অযোগ্য বলা যাবে না।
বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ অভিযোগের বিষয়টি জানেন। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।