প্রযুক্তি ডেস্ক:
রোবট কি ভবিষ্যৎ পৃথিবী দখল করে নেবে? দাসে পরিণত হবে মানুষ?
এ প্রশ্নগুলোর কোনো সহজ উত্তর না থাকলেও দৈনন্দিন জীবনে রোবটের উপস্থিতি নিয়ে মানুষের মনোভাব আর মিথ্রস্ক্রিয়ার খুঁটিনাটি জানতে পাঁচ বছরের এক প্রকল্প হাতে নিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস অ্যাট অস্টিনের গবেষকরা।
প্রকল্পের অংশ হিসেবে ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস জুড়ে ঘুড়ে বেড়াবে চার পেয়ে রোবট। আর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রোবটগুলোর সম্পর্কের তথ্য সংগ্রহ করবেন গবেষকরা।
মানুষের দৈনন্দিন জীবনে রোবটের উপস্থিতিকেন্দ্রীক জটিলতা নিয়ে ইউনিভার্সটির কলেজ অফ ন্যাচারাল সায়েন্সস-এর সহকারী অধ্যাপক জয়দ্বীপ বিশ্বাস বলেন, “বাস্তব পৃথিবীতে আমরা যখন রোবটগুলোকে কাজে লাগাই, তখন এটা কেবল একটা প্রযুক্তির বিষয় নয়, এটা একটা সামাজিক ও প্রযুক্তিগত বিষয়।
ক্যাম্পাসে ছুটে বেড়াবে চার পেয়ে রোবট
প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট আর্স টেকনিকা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বস্টন ডানামিক্স এবং ইউনিট্রির তৈরি দুই ধরনের চার পেয়ে রোবট ঘুরে বেড়াবে ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস অ্যাট অস্টিনের ক্যাম্পাসে। আর ক্যাম্পাসে উপস্থিত শিক্ষার্থী আর কর্মীরা স্মার্টফোন অ্যাপ দিয়ে রোবটের মাধ্যমে হ্যান্ডওয়াইপ আর হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ডেলিভারি নিতে পারবেন।
প্রকল্পটি দুটি রোবট নিয়ে শুরু হলেও পরে এর সংখ্যা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা জানিয়েছেন বিশ্বাস।
মাঠে নামার পর পথচারী, সাইক্লিস্ট, স্কুটার রাইডার এবং অন্যান্য যানবাহনের সামনে পড়বে রোবটগুলো। আর ঠিক এমন পরিস্থিতিগুলোই পর্যবেক্ষণ করতে চান গবেষকরা। রোবট আর মানুষের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়টির ওপর নজর রাখবেন তারা।
আর্স টেকনিকা জানিয়েছে কখনো বা সশরীরে, কখনো বা দূর থেকে রোবটগুলোর ওপর নজর রাখবেন গবেষকরা। এ ক্ষেত্রে রোবটগুলো অনাকাঙ্খিত কিছু করে বসলে তাদের থামিয়ে দেওয়ার সক্ষমতাও থাকবে গবেষকদের হাতে।
বস্টন ডায়নামিক্সের তৈরি রোবট কুকুর স্পট।
সংগৃহিত ডেটা নিয়ে আলাদা একটি ডেটাবেইজ বানাবেন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। মানুষের উপস্থিতি আছে এমন পরিবেশে স্বয়ংক্রিয় রোবটিক্স প্রযুক্তির সবচেয়ে কার্যকর ব্যবহার নিয়ে অনুসন্ধান চালাবেন তারা।
রোবট আর মানুষের মিথস্ক্রিয়া ছাড়াও একটি রোবট কীভাবে নিজের উদ্দেশ্য জানান দিতে পারে সে বিষয়ে অনুসন্ধান চালাতে আগ্রহী গবেষকরা।
একই স্থানে মানুষ ছাড়াও, গাড়ি, সাইকেল এবং স্কুটারের উপস্থিতি আছে এমন জটিল পরিস্থিতিতে রোবটগুলো কীভাবে নিজের পরবর্তী পদক্ষেপের জানান দিতে পারে সে বিষয়টিও পর্যালোচনা করে দেখতে চান গবেষকরা।
এ ছাড়াও ভুল করলে রোবটগুলো সে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সম্ভাব্য উপায় কীভাবে শিখছে সে বিষয়টিও গবেষণার অন্তর্ভূক্ত বলে জানিয়েছে আর্স টেকনিকা।
‘এমন চ্যালেঞ্জিং ও বাস্তব পরিস্থিতিকেই’ মোকাবেলা করতে চান বলে জানিয়েছেন বিশ্বাস। “বিরক্তির কারণ হয়ে না দাঁড়িয়ে রোবটগুলো যত বেশি এলোমেলো পরিস্থিতি সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে পারবে, তত বেশি অগ্রগতি হবে আমাদের।”
প্রতিবন্ধকতাও আছে:
ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে এমন গবেষণা পরিচালনার ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিক দুটোই আছে বলে জানিয়েছেন বিশ্বাস। ইতিবাচক দিক হচ্ছে, গবেষকদের হাতের নাগালেই থাকবে রোবটগুলো। আর ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরাও রোবটের উপস্থিতির সঙ্গে সহজে মানিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করছেন গবেষকরা।
“এমন দর্শকদের সঙ্গে কাজ করা তুলনামূলক সহজ হবে… রোবটগুলোকে সম্ভবত খোলা মনেই স্বাগত জানাবে তারা,” বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানায় গবেষণা প্রকল্প পরিচালনা প্রসঙ্গে বলেছেন বিশ্বাস।
অন্যদিকে নিজস্ব রোবট নির্ভর ডেলিভারি প্রকল্পগুলোর পরিধি সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ছোট করে এনেছে অ্যামাজন ও ফেডেক্সের মতো কোম্পানিগুলো। আর্থনৈতিক জটিলতাসহ নানা কারণে এমনটা হতে পারে বলে মনে করেন বিশ্বাস।
কিন্তু বিশ্বাস আর সহকর্মীরা ভাবছেন রোবটিক্স প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে, “আজকের দিনের বিষয় নিয়ে নয়।”