ভারতের ভিসা আবেদন: যেসব বিষয় জেনে রাখা জরুরি

 মোহাম্মদ ঈমাম হোসেইন:

ভারতে যাওয়া এখন কোন বিলাসিতা নয়।  প্রয়োজীয় চিকিৎসা, বেড়াতে যাওয়াসহ নানা কারণেই আগ্রহ থাকে সহজেই ভ্রমনযোগ্য পাশের এই বৃহৎ দেশটির প্রতি  । বিশেষ করে ইদানীং এদেশের পর্যটকদের প্রবল আগ্রহ ভারতের সিকিম, দার্জিলিং, কাশ্মীর, শিমলা-মানালিসহ বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গার প্রতি।  আর সেখানে যেতে চাইলে ভিসা লাগবে। কিন্তু সমস্যা হলো ভারতীয় ভিসার আবেদন কোথায় করবেন, কীভাবে করবেন এমন সব তথ্য আমাদের জেনে রাখা জরুরি। আসুন এ বিষয়গুলো আমরা জানার চেষ্টা করি।

কোথায় আবেদন করবেন
অনলাইনে নিজেই  https://indianvisa-bangladesh.nic.in/visa -এই ওয়েবসাইটে আবেদন করতে পারেন। অথবা সেবাদানকারি কোন কম্পিউটার দোকান/ সেন্টারে গিয়ে দক্ষ অপারেটরের সহযোগিতায় আবেদন ফরম পূরণ করতে পারেন। বাংলাদেশিদের জন্য ১৫টি ভারতীয় ভিসা আবেদনকেন্দ্র (আইভ্যাক) আছে। এগুলোর অবস্থান ঢাকা (যমুনা ফিউচার পার্ক), যশোর, খুলনা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, সাতক্ষীরা, বগুড়া, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লায়।

বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যারা চট্টগ্রাম বিভাগ, রাজশাহী,  সিলেট, খুলনা বিভাগ ছাড়া অন্যান্য বিভাগে বাস করছেন, তাঁরা আইভ্যাক, ঢাকায় (যমুনা ফিউচার পার্ক ) ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। অন্যরা আইভ্যাক খুলনা, ময়মনসিংহ, যশোর, বরিশাল, সিলেটে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

যেসব পাসপোর্টধারী চট্টগ্রাম বিভাগের বাসিন্দা যেমন কুমিল্লা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তারা আইভ্যাক, চট্টগ্রামে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। বাংলাদেশি নাগরিক, যারা রাজশাহী বিভাগে বাস করেন, তারা রাজশাহী, রংপুর আইভ্যাকে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। যারা সিলেট বিভাগে বাস করছেন, তারা আইভ্যাক সিলেটে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।

আবেদনের সময়
অনলাইনে আবেদন করে প্রিন্ট আউট নিয়ে সেটি জমা দিতে হবে নির্দিষ্ট কেন্দ্রে। অনলাইনে নির্দেশিত সময়ে আবেদনপত্র জমা দেবেন। ঢাকার ভিসা সেন্টারে আবেদনপত্র সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টার মধ্যে যেকোনো সময় জমা দিতে পারবেন। অন্য ভিসা সেন্টারগুলোতে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত আবেদনপত্র গ্রহণ করা হয়।

বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা ফি
বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের ভারতীয় ভিসার জন্য আবেদন করতে কোনো ভিসা ফি নেই। তবে বাংলাদেশের যেকোনো আইভ্যাকে ভিসার জন্য আবেদন করা ব্যক্তিদের ৮০০ টাকা ভিসা প্রসেসিং ফি (ভিপিএফ) দিতে  হবে, এটি অফেরতযোগ্য।

ভিসা আবেদন ফরম
ভিসা আবেদন ফরম পূরণের সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। বাধ্যতামূলক কলাম সতর্কতার সঙ্গে পূরণ করতে হবে। ভুল তথ্য ভিসা আবেদনকে সরাসরি প্রত্যাখ্যানের দিকে নিয়ে যাবে। * চিহ্নিত কলাম পূরণ বাধ্যতামূলক। নাম, বংশগত নাম এবং অন্যান্য বর্ণনা পাসপোর্টে উল্লেখিত বিষয়ের সঙ্গে মিল থাকতে হবে। পাসপোর্ট নম্বর, ইস্যুর স্থান, তারিখ এবং মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ পাসপোর্টে যেভাবে আছে সেভাবে থাকতে হবে।

বর্তমান ঠিকানা হিসেবে আপনার ইউটিলিটি বিলে যা উল্লেখ করা আছে, সেটি দিতে হবে। ই-মেইল আইডি ও মোবাইল নম্বর সঠিক হতে হবে।

ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  • মূল পাসপোর্ট, ভিসার আবেদন দাখিল করার তারিখের আগে থেকে সর্বনিম্ন ৬ মাস মেয়াদি হতে হবে। পাসপোর্টে অন্তত দু’টি সাদা পাতা থাকতে হবে।
  • আবেদনপত্রের সঙ্গে সব পুরোনো পাসপোর্ট জমা দিতে হবে।
  • একটি সদ্য তোলা (৩ মাসের বেশি পুরোনো নয়) ২x২ (৩৫০x৩৫০ পিক্সেল) সাইজের রঙিন ছবি। এতে পুরো মুখমণ্ডল দেখা যেতে হবে এবং ছবির পেছনের অংশ সাদা হতে হবে।
  • জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ইউটিলিটি বিল যেমন বিদ্যুৎ, টেলিফোন, গ্যাস বা পানির বিলের অনুলিপি।
  • চাকরিদাতার কাছ থেকে সনদ। শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড এর অনুলিপি সংযুক্ত করতে হবে।
  • অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তির অবসরপ্রাপ্ত কাগজপত্র, যারা ব্যবসা করেন বাণিজ্য সনদপত্র প্রয়োজন।
  • সর্বশেষ ৩ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্টের অনুলিপি দিতে হবে, এক্ষেত্রে, অ্যাকাউন্টে ভ্রমণ উপযোগী যথেষ্ট পরিমাণ টাকা থাকাটা জরুরি।
  • অনলাইন ভিসা অ্যাপ্লিকেশন ফরম যেটাতে বিজিডি (BGD) নিবন্ধন নম্বর থাকবে।
  • আবেদনকারীকে অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন ফরমে নির্ধারিত স্থানে ছবি স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে।
  • সাক্ষাতের দিন আবেদনপত্রের সঙ্গে অবশ্যই সব পুরোনো পাসপোর্ট জমা দিতে হবে। সব পুরোনো পাসপোর্ট ছাড়া আবেদনপত্র অসম্পূর্ণ বলে বিবেচিত হবে।
  • আবেদনপত্র অবশ্যই ৮ দিনের মধ্যে জমা দিতে হবে |

বিমান/রেল/স্থল বন্দর নির্বাচন”
ভারতের ভিসার জন্য আবেদন করলে আগে মাত্র চারটি পোর্ট বা বন্দর উন্মুক্ত ছিল আপনার জন্য। এ চারটি ছিল এয়ারে ভারতের যেকোনো বিমানবন্দর, বাই রোডে হরিদাশপুর (বাংলাদেশ অংশে বেনাপোল), গেদে (বাংলাদেশ অংশে দর্শনা), ট্রেনে গেদে (মৈত্রী এক্সপ্রেস)। কিন্তু এখন এয়ারে এয়ারে আগের মতো ভারতের যেকোনো বিমানবন্দর ব্যবহারে যেতে পারলেও বাই রোড আগরতলা (বাংলাদেশ অংশে আখাউড়া) ও গেদে শুধু ট্রেনে (মৈত্রী এক্সপ্রেসের জন্য প্রযোজ্য) যাওয়া যাবে।

এগুলো বাদে আপনি একটি পোর্ট বাছাই করতে পারবেন। কলকাতা হয়ে আসা/যাওয়ার দরকার পড়লে হরিদাসপুর (বেনাপোল) হয়ে যেতে হবে। যেহেতু এটা এমনিতেই পাবেন চাইলে অন্য একটি পোর্ট যেমন ডাউকির (তামাবিল) জন্য আবেদন করে রাখতে পারেন।

দার্জিলিং/সিকিমের পরিকল্পনা থাকলে বাই রোড চেংড়াবান্দা (বাংলাদেশ অংশে বুড়িমারী) দেবেন। এ ছাড়া ভারত-বাংলাদেশের নতুন ট্রেন মিতালী এক্সপ্রেসের পোর্ট বাই ট্রেন নিউ জলপাইগুড়ি। এদিক দিয়ে যেতে পারবেন যা অবশ্যই অনলাইনে আবেদনের সময় এন্ট্রি/উল্লেখ থাকতে হবে।।

ভারতের মেঘালয় যেতে চাইলে আপনাকে চোখ বন্ধ করে বেছে নিতে হবে ডাউকি (বাংলাদেশ অংশে তামাবিল)। ত্রিপুরা যেতে চাইলে আগরতলা (বাংলাদেশ অংশে আখাউড়া) উল্লেখ করতে হবে।। তবে আগরতলা পোর্ট যেহেতু এমনিতেও পাবেন, চাইলে অন্য একটা পোর্ট নিয়ে রাখতে পারেন।

আবেদনের সময় ট্রেনের পোর্ট ঢাকা কলকাতা ঢাকা রুটে মৈত্রী এক্সপ্রেসের জন্য গেদে (দর্শনা), খুলনা কলকাতা খুলনা রুটে বন্ধন এক্সপ্রেসের জন্য পেট্রোপোল (বেনাপোল) ও ঢাকা-শিলিগুড়ি-ঢাকা রুটে মিতালী এক্সপ্রেসের জন্য নিউ জলপাইগুড়ি উল্লেখ করতে হবে।