মোহাম্মদ ঈমাম হোসেইন:
নভেম্বরে পাইকারি পর্যায়ে ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পর বৃহস্পতিবার নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি দাম বাড়ানো হয়েছে ৫ শতাংশ। ইউনিটপ্রতি গড় দাম বাড়ছে ৩৬ পয়সা। ১৪ বছরে ১১ বারের মতো বিদ্যুতের খুচরা দাম বাড়ল। জানুয়ারি থেকেই এই বর্ধিত দাম কার্যকর হবে। বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম নির্ধারণে জনগণের স্বার্থরক্ষার একমাত্র সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। তাদের পাশ কাটিয়ে নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়াল সরকার। এর আগে কখনো এভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়নি।
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর গণশুনানির সময় এবং পরে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সংবাদমাধ্যমকে কয়েকবার বলেছিলেন, সরকার নির্বাহী আদেশে দাম বাড়াবে না। দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেবে বিইআরসি। প্রশ্ন হলো, তাহলে বিইআরসিকে পাশ কাটিয়ে তড়িঘড়ি করে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর এই নির্বাহী আদেশ কেন?
পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ থেকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণসহায়তা পাওয়ার জন্যই এটা করা হয়েছে। আইএমএফ সরকারকে ঋণ দিতে প্রাথমিকভাবে রাজি হলেও জুড়ে দিয়েছে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি তেলের ভর্তুকি তুলে নেওয়ার মতো সব শর্ত। ঋণচুক্তি চূড়ান্ত করতে আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ বাংলাদেশে আসছেন ১৬ জানুয়ারি।
দাম বাড়ানোর ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন সংশোধন করে গত ১ ডিসেম্বর অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। সংশোধনের সময় বলা হয়েছিল, বিশেষ পরিস্থিতিতে দাম বাড়াবে সরকার। ১২ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো সরকার এ ক্ষমতার প্রয়োগ করল। গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর একটি প্রস্তাব গণশুনানি শেষে আদেশের অপেক্ষায় আছে। সেই আদেশ আসতে দেরি হবে এবং তত দিনে আইএমএফ মিশন ঢাকা ছেড়ে যাবে। সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সংস্কারে ইতিবাচক—এমন ধারণা দেওয়ার জন্যই তড়িঘড়ি করে বিইআরসিকে পাশ কাটিয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হলো।
আইএমএফের প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফরের সঙ্গে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর যোগসূত্রের বিষয়টি ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওসার আমির আলীও প্রকারান্তরে স্বীকার করেছেন। তবে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম বলেছেন, ‘১২-১৩ বছর সরকারি রেগুলেটরের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোকে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্যে এনে জবাবদিহির জন্য যে আন্দোলন করা হচ্ছে, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর এই একতরফা সিদ্ধান্তে তা হোঁচট খেল। এটা আইনের দর্শনের পরিপন্থী। তাতে বোঝা যায়, সরকার জবাবদিহির মধ্যে আসতে
চায় না।’
গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে ভোক্তাদের ওপর যে চাপ বাড়বে—তাতে সন্দেহ নেই। এর প্রভাব বাজারেও পড়বে বলে আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। একশ্রেণির মুনাফালোভী সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর অজুহাতে বাজারে জিনিসপত্রের দাম যেন যুক্তিহীনভাবে বেড়ে না যায়, সরকার সেটা নিশ্চিত করতে না পারলে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বাড়বে।