আবদুল্লাহ আল-মামুন:
মানসিক ভারসাম্যহীন বুলবুল। ১৭ বছর ধরে ঘুরে বেড়াতেন ফেনী শহরের অলি-গলিতে। খাওয়া-দাওয়ায় অনাগ্রহী এ ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হয়নি ফেনীর স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। এত বছর ফেনী শহরে তার চলাফেরা হলেও কখনো কাউকে বিরক্ত করতেন না তিনি। নিজের মতই থাকতেন তিনি। রাস্তা-ঘাট, রেলপথ, বাসস্ট্যান্ডসহ ফেনী শহরের সব জায়গায় ছিল তার পদচারণা।
বুলবুল দীর্ঘদিন ফেনী জেনারেল হাসপাতালে অজ্ঞাত পরিচয়ধারী হিসেবে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে তিনি মারা যান। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়’র তত্বাবধায়নে চিকিৎসা ও মারা যাওয়ার পর বুলবুলের ছবিসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় খোঁজা হলে তার সন্ধান মেলে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। এত বছর পর পরিচয় মিললেও বাড়ি ফিরছেন লাশ হয়ে।
বুলবুলের ভাই রেজাউল করিম রিপন বলেন, আমার ভাই বুলবুল ১৯৮৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করার পর মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। ২০০৬ সালে আমার বাবা মাস্টার আবদুস সাত্তারের মৃত্যুর পর বুলবুল হঠাৎ নিখোঁজ হয়। প্রায় ১০/১২ বছর পর আমরা বুলবুল ফেনীতে থাকার বিষয়টি জানতে পেরে তাকে নিয়ে আসতে যাই। কিন্তু তাকে অনেক জোর জবরদস্তি করেও আনতে পারিনি। এরপর থেকে যাতায়াতের দূরত্বের কারণে বছরের পর বছর তার খবরাখবর আমরা আর পাইনি। শুক্রবার ফেসবুকে ছবি দেখে আমাদের এক আত্মীয় বুলবুলের মৃত্যুর বিষয়টি আমাদের জানায়। আমার ছোটভাই ও বড়াইল ইউপি সদস্য মশিউর রহমান লেবু মরদেহ আনতে ফেনী গেছেন। সেখানে প্রথম নামাজে জানাজা শনিবার বেলা ১১টায় ফেনী সদর হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মরদেহ নিয়ে জয়পুরহাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। জয়পুরহাটে দ্বিতীয় নামাজের জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হবে।
ফেনীর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়’র সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ দুলাল তালুকদার বলেন, গত সপ্তাহে বুলবুল অসুস্থ হলে সহায়ের তত্বাবধানে আমরা চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। মানসিক ভারসাম্যহীন এ ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে ফেনী শহরে থাকলেও কেউ তার পরিচয় দিতে পারেনি। বৃহস্পতিবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হলে সহায়ের সদস্যসহ অন্যান্যরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ছবি দিয়ে পরিবারের সন্ধান চেয়ে পোস্ট দেন। এরপরই তার পরিচয় মেলে। তার নাম আতাউর রহমান বুলবুল। তিনি জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার বড়াইল ইউনিয়নের আবদুস সাত্তার মাস্টারের ছেলে।