শিরোনাম

দ. আফ্রিকায় পিতা-পুত্রের মৃত্যু, সোনাগাজীতে স্বজনদের আহাজারি

গত শুক্রবার দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে লরিচাপায় পাঁচ বাংলাদেশি প্রবাসী নিহত হন। দুর্ঘটনায় আবুল হোসেনের ছেলে নাদিম হোসেনও (১০) নিহত হয়। দুর্ঘটনার খবরে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় চর মজলিশপুর গ্রামে তাঁদের বাড়িতে ভিড় করেন স্বজন ও এলাকাবাসী।

জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমার বুকের ধন আবুল হোসেন বলেছিল, “বাবা, ঘরের দোতলার ছাদ করার জন্য পিলার তুলে রাখেন। আমি রোজার ঈদে বাড়ি আসলে দোতলার ছাদ করব।” তাঁর কথায় দোতলা করতে পিলারের কাজ শেষ করে রেখেছি। আমার ছেলে ও নাতি তো আর এল না। আমার ছেলে ও নাতির লাশ দেশে আনব কীভাবে, কে আনবে? আল্লাহ কেন ছেলের আগে আমাদের নিয়ে গেলা না। ছেলের সুখের জন্য জীবনের ৩৭টি বছর প্রবাসে কাটিয়েছি। কখনো কষ্ট দিই নাই।’

আবুল হোসেনের স্বজনেরা জানান, আবুল হোসেন ২০১০ সালে ফেনী সরকারি কলেজে স্নাতক (সম্মান) পড়ার সময় জীবিকার তাগিদে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি দেন। এরপর আর বাড়িতে ফেরেননি। তিনি আফ্রিকা যাওয়ার পর এক কৃষ্ণাঙ্গ নারীকে বিয়ে করেন। একটি ছেলেসন্তান জন্মের পর তাঁদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এর পর থেকে ছেলেকে সব সময় সঙ্গে রাখতেন তিনি। ১৯ ফেব্রুয়ারি মুঠোফোনে বাবা জামাল উদ্দিনের সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয় আবুলের। আগামী এপ্রিলে দেশে ফেরার কথা জানিয়েছিলেন।

জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি আফ্রিকা থেকে দুই বছর আগে এসেছি। ১০ শতক জমি কিনে তিনতলা ভিত্তির ওপর ঘরও করেছি। ছেলেকে বিয়ে করানোর কথা ছিল। এমন সংবাদ শুনে সবকিছু যেন মাটি হয়ে গেল। শুক্রবার জুমার নামাজ পড়ে দুপুরের খাবার খেতে বসার পর দুর্ঘটনার খবর শুনে খাবার আর পেটে ঢোকেনি। এখন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আকুল আবেদন, যাতে আমার সন্তান ও নাতির লাশটা দেশে ফেরত আনতে সহযোগিতা করেন।’

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পরিবারটিকে সান্ত্বনা দিতে তাঁর বাড়িতে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুল হাসান, জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (সোনাগাজী-দাগনভূঞা সার্কেল) তসলিম হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম অনীক চৌধুরী, সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালেদ হোসেন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এম এ হোসেন।

ইউএনও কামরুল হাসান বলেন, আবুল হোসেন দীর্ঘদিন ধরে আফ্রিকায় গাড়িচালকের পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। দুর্ঘটনায় তাঁর আফ্রিকান ছেলে নাদিমও মারা গেছেন। জন্ম ওই দেশে হওয়ায় সে সেখানকার নাগরিক ছিল। দুর্ঘটনার খবরে তাঁর বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের খোঁজখবর নিয়েছেন।

Share now

আরও পড়ুন