নাজমুল হক শামীম, ফেনী:
ফেনীর দাগনভূঁঞায় একটি মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত হওয়ার পর পুরানো শিক্ষকদের বাদ দিয়ে ‘অনিয়ম ও দুর্নীতির’ মাধ্যমে নতুনদের নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
‘বেতুয়া জামেয়ায়ে হযরত আবু বক্কর ছিদ্দিক (রা.) দাখিল মাদ্রাসার’ এ ঘটনা ঘটে বলে কয়েকজন শিক্ষক ও অভিভাবক অভিযোগ করেন। বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে তারা দাগনভূঁঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা-ইউএনও ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সহকারী মৌলভী আবুল কালাম আজাদ ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত সুপার মো. আবুল কালাম ইউএনও বরাবর দুটি অভিযোগ দিয়েছেন। এ ছাড়া ২৭ জন অভিভাবকও একটি অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
ইউএনও নাহিদা আক্তার তানিয়া আগামী ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে মাদ্রাসা সুপারকে নতুন শিক্ষক নিয়োগের কাগজপত্র জমা দিতে বলেছেন।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, ফেনীর দাগনভূঁঞা পৌরসভা এলাকায় ১৯৮৮ সালে বেতুয়া জামেয়ায়ে হযরত আবু বক্কর ছিদ্দিক (রা.) দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। চলতি বছর এটি এমপিওভুক্ত হয়। এমপিওভুক্তির পরপরই মাদ্রাসার সুপার মোহাম্মদ মাছুম বিল্লাহ ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ নানা অনিয়মের আশ্রয় নেয়। মাদ্রাসার দীর্ঘদিনের শিক্ষকদের না জানিয়ে গোপনে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নতুন শিক্ষক নিয়োগ করে তাদের এমপিওভুক্ত করে নেওয়া হয়েছে।
নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের নামে সরকার থেকে পাওয়া কয়েক লাখ টাকা তারা দুর্নীতির মাধ্যমে উত্তোলন করেন বলেও অভিযোগ করা হয়।

বিষয়টি জানাজানি হলে এমপিও বঞ্চিত শিক্ষকসহ ছাত্র-ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দেয়। তারা বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
মাদ্রাসার অফিস সহকারী পদে দীর্ঘদিন কর্মরত গিয়াস উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সরকার মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্ত করেছে। কিন্তু আমি দীর্ঘদিন কর্মরত থেকেও কী কারণে এমপিওভুক্ত হওয়া থেকে বঞ্চিত হলাম তা জানি না।”
মাদ্রাসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মাওলানা আবুল কালাম বলেন, “২০১৭ সাল পর্যন্ত আমি এ মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার পদে কর্মরত ছিলাম। এ ছাড়া দীর্ঘদিন এ মাদ্রাসায় সুনামের সাথে শিক্ষকতা করে আসছি। মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্ত করার ঘোষণা দেওয়ার পর আমার কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করা হয়।
আমি টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এমপিও শিটে আমার নাম নেই। যারা নিয়োগ পেয়েছেন তারা কখনও ছিল না, বর্তমানেও নেই।” অনিয়ম-দুর্নীতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাদ্রাসার সুপার মোহাম্মদ মাছুম বিল্লাহ বলেন, “এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।” অভিযোগের বিষয়ে মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমানের কাছে বক্তব্য জানতে ফোনে কয়েকবার কল করলেও তিনি ধরেননি।
দাগনভূঁঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা আক্তার তানিয়া বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর শুনানির জন্য উভয় পক্ষকে গত ২১ ডিসেম্বর ডাকা হয়েছিল। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আরও সময় আবেদন করায় মাদ্রাসা সুপারকে নতুন শিক্ষক নিয়োগের কাগজপত্র জমা দেওয়ার জন্য আগামী ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।
“একই সাথে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ওই মাদ্রাসার কাগজপত্র সমূহ ভালো করে দেখতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।” অভিযোগ প্রমাণিত হলে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।