শিরোনাম

দক্ষিণ আফ্রিকায় সব স্বপ্ন নিমেষেই শেষ দাগনভূঞার মিলনের

দাগনভূঞা, ফেনী:

২০১১ সালে জীবিকার উদ্দেশ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি জমান ফেনী দাগনভূঞার আনিসুল হক মিলন (৩০)। দীর্ঘ ১৩ বছর আফ্রিকার বিভিন্ন শহরে ব্যবসা-বাণিজ্য করে দেশে নিজের পরিবারকে অনেকটা স্বাবলম্বীও করেছেন। সম্প্রতি পারিবারিকভাবে মোবাইল ফোনে বিয়ে করেন খালাতো বোন শাহেদা আক্তারকে। দেশে আসার পর আনুষ্ঠানিকভাবে নববধূকে ঘরে তুলে আনবেন এমনটাই কথা ছিল। গত শনিবার বাংলাদেশে পৌঁছার কথা ছিল আনিসুল হক মিলনের। কিন্তু তাঁর সেই স্বপ্ন নিমেষেই শেষ হয়ে গেল।

আগের দিন শুক্রবার দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন থেকে বাংলাদেশে আসার জন্য জোহানেসবার্গ বিমানবন্দরে আসার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় চার বন্ধু ও বন্ধুর ছেলে ঘটনাস্থলে মারা গেলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার স্থানীয় জজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। তিন দিন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় তাঁর মৃত্যুর খবর আসে দেশে। এ সময় স্বজনদের কান্না আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে বাড়ির আশপাশের পরিবেশ।

মিলনের ছোট ভাই সাইদুল হক রিমন বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ১৩ বছর পর গত শনিবার দেশে আসার কথা ছিল তাঁর। গতকাল সন্ধ্যায় ভাইয়ের মৃত্যুর খবর আসে। পারিবারিকভাবে ১০ দিন আগে ভাইয়ের সঙ্গে খালাতো বোন শাহেদা আক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয়। দেশে আসার পর ১০-১৫ দিনের মধ্যে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নববধূকে ঘরে তুলে নেবেন এমনটাই কথা ছিল।’

বড় বোন রাজু আক্তার কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ভাই বলেছে-বোন ধৈর্য ধর, এইবার দেশে আসলে তোর ছেলেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের অথবা বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করব। তোকে ঘর তৈরি করে দেব। কিন্তু আমার ভাইয়ের সে আশা আল্লাহ পূরণ করল না।’

মিলনের বাবা বাহার মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলে এত তাড়াতাড়ি দুনিয়া থেকে চলে যাবে এই কথাটা ভাবতে পারছি না। দুই মাস আগে ছেলে আফ্রিকাতে নতুন ব্যবসা চালু করেছে সে জন্য ব্র্যাক ব্যাংক থেকে পাঁচ লাখ টাকা লোন নিয়ে তার কাছে পাঠাই। এখন আমি ছেলে হারিয়ে ধার দেনা হয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। কীভাবে পরিশোধ করব এই টাকা।’

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘মিলন দেশে আসলেই তার বিয়ের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নববধূকে ঘরে তুলে নেওয়ার কথা ছিল। গতকাল সরেজমিন তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জেনেছি। আগামী দুই এক দিনের ভেতরে আফ্রিকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ফেনীর সবার লাশ একসঙ্গে আসার কথা রয়েছে।’

Share now

আরও পড়ুন