মাসুদ আলম:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘কষ্টের জীবন’ নামে ভুয়া আইডি খুলে বিভিন্ন ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে সমকামিতার প্রস্তাব দিত তারেক আহাম্মেদ। তারপর আগ্রহীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতেন। পরে সাক্ষাতের জন্য গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ডেকে এনে জিম্মি করে আদায় করতেন মোটা অংকের টাকা। টাকা না দিলে হত্যার হুমকি ও নির্যাতন করা হতো।
২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়ন থেকে এই চক্রের ডাকে ঢাকায় আসেন আমির হোসেন (২৫) । এরপর গাজীপুরে দেখা করতে গিয়ে চক্রের ফাঁদে পড়ে জিম্মি হন। আমিরের বোনের কাছে মুক্তিপণ চাওয়া হয় ১০ লাখ টাকা। কিন্তু মুক্তিপণ না পেয়ে আমিরকে হত্যা করে মরদেহ গুম করা হয়।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে বুধবার নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপ এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের মূলহোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির দক্ষিণখান থানা পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলেন, চক্রের মূলহোতা মো. তারেক ওরফে তারেক আহাম্মেদ (৩১), মোহাম্মদ হৃদয় আলী (২৯), আশরফুল ইসলাম (২৩), রাসেল সরদার (২৫) ও তৌহিদুল ইসলাম বাবু (৩০)। তারেক একজন সমকামী।
বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উত্তরা বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের তুলাচারা গ্রামের মুনসী বাড়ির আবু তাহেরের ছেলে আমির হোসেন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে ঢাকা আসেন। এরপর ২২ ডিসেম্বর দক্ষিণখান থানার আশকোনা মেডিকেল রোডে আমিরের বড় বোন নুরনাহার বেগম (৩৪) বাসায় ওঠেন। এরপর আমির চক্রটির সঙ্গে গাজীপুরের চৌরাস্তা দেখা করতে গিয়ে জিম্মি হন। ২৮ ডিসেম্বর আমিরের ছোট বোন কামরুন্নাহারকে (২২) চক্রের সদস্যরা তার ভাইয়ের মুক্তির জন্য ১০ লাখ টাকা দাবি চেয়ে ফোন করেন। ওই ঘটনায় আমিরের বড় ভাই বিল্লাল হোসেন (৪০) দক্ষিণখান থানায় ওই দিনই একটি জিডি করেন।
তিনি আরও বলেন, প্রত্যাশিত মুক্তিপণ না পেয়ে এবং পুলিশের কাছে ধরা পরার ভয়ে গত ২৯ ডিসেম্বর আমিরকে হত্যা করে লাশ শ্রীপুরে সেফটিক টাংকিতে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে চলতি বছরের গত ১৩ এপ্রিল নিহতের বড় ভাই বিল্লাল থানায় অপহরণ মামলা করেন। অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা অত্যন্ত দুর্ধর্ষ ও চতুর। তাদেরকে শনাক্ত করতে বেশ কয়েকবার কৌশল পরিবর্তন করা হয়। পরবর্তীতে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় চক্রের সদস্য আশরাফুল ইসলামকে সাভারের জিরাবো এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যে রাসেল সরদার ও তৌহিদুল ইসলাম বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিসি বলেন, গ্রেপ্তার তিনজনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তারেক আহাম্মেদ ও তার সহযোগী মোহাম্মদ হৃদয় আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকার একটি বাড়ির পরিত্যক্ত সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে অপহৃত আমিরের হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পলিথিনে মোড়ানো বস্তাবন্দি গলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, চক্রটি বিভিন্ন সময় ফেসবুক মেসেঞ্জারে বিভিন্ন ব্যক্তিকে সমকামিতার প্রস্তাব দিতেন। তার প্রস্তাবে রাজি হওয়া তরুণদের শ্রীপুরে তাদের মেসে নিয়ে মোবাইল ও টাকা কেড়ে নিয়ে ছেড়ে দিতেন।